শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪

মাতৃত্বের স্বাদ

 


“হ্যালো! মিস বিশ্বাস?” 

অচেনা স্বর, কিন্তু বাঙালি উচ্চারণ। “ইয়েস, ’অ্যাম ডক্টর বিসওয়াস। হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?”

কোভিড-এর কড়া লকডাউন আলগা হবার পর, প্রায় রোজই দু’তিনটে নতুন ফোনকল পাই। যাদের সত্যিকারের প্রয়োজন, যারা গৃহবন্দি অবস্থায় কোনও সাহায্য পায়নি, তারা এখন তেড়েফুঁড়ে ফোন করে। আবার অনেকে দীর্ঘদিন ঘরে আটকা থেকে বিপর্যস্ত হয়ে করে। এই মহিলা কোন দলে?

“আপনি বাংলা বলেন?” 

আমার ইতিবাচক উত্তর শোনার আগেই ওদিক থেকে তোড়ে কথা ছুটল। 

“আমি দেবত্রীর মা, অনসূয়া দাম। আপনার সঙ্গে দেখা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এখনই আসতে চাই। খুব দরকার। কতগুলো বিশেষ কথা আছে।”

দেবত্রী সরকার আমার পেশেন্ট। কয়েক মাস হল আসছে। তার মা? কিন্তু ‘দরকার’ বললেই ছাড়পত্র দিতে হবে নাকি! দেবত্রী নিজের থেকে আমার কাছে আসেনি— বন্ধু মনোবিজ্ঞানী ডাঃ জুলিয়া প্রেন্টিসের সুপারিশে এসেছে। যবে থেকে প্র্যাকটিস আরম্ভ করেছি, জুলিয়া কিছু কিছু রোগী থেরাপির জন্যে পাঠায়। মানসিক রোগে সাইকায়াট্রিস্টরা ওষুধের প্রেসক্রিপশন লেখে ঠিকই, কিন্তু মনের জট খোলার কাজে লাগতে হয় আমাদের। আবার মানসিক ভারসাম্য মোটামুটি থিতু না হলে থেরাপির কাজ করা যায় না। তার জন্যে লাগে ওষুধ। অর্থাৎ আমরা দু’জনেই দু’জনের পরিপূরক। জানি না চিনি না, এক মহিলা ‘কথা আছে’ বললে তো চলবে না… ওঁর মেয়ে যে আমার পেশেন্ট তাও স্বীকার করতে পারি না। গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব আছে আমার!

দেবত্রীকে যখন ওর স্বামী জুলিয়ার কাছে নিয়ে গেছিল তখন মেয়েটার বেশ ম্যানিক অবস্থা। মিষ্টি চেহারার ঝকঝকে মেয়ে, চোখেমুখে কথা বলছে— কথার গতিতে মেশিনগানের স্পিড। একই সঙ্গে হাত-পায়ে উইন্ডমিল চলছে। পরে শুনেছি অভিবাসী বাঙালি সমাজে দেবত্রীর বর্ণনা – প্রাণোচ্ছল, চঞ্চল, আড্ডাবাজ। একটু বেশি বকবক করে ঠিকই, কিন্তু কী পরোপকারী, হাসিখুশি! আর সুন্দর মুখের জয় তো সর্বত্র হবেই। সবার মুখে একটা বিশেষণ বারবার ঘুরেছে – প্রাণবন্ত! 

দেবত্রী এদেশে এসেছিল নিউ জার্সির এক বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের স্নাতকোত্তর ছাত্রী হয়ে। পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো না হলে হুট করে বৃত্তি পেয়ে কেউ বিদেশ আসতে পারে না – বিশেষ করে আজকের দিনে। আসার কিছুদিনের মধ্যেই মেয়েটা ইউনিভার্সিটির ফরেন স্টুডেন্টস্‌ গ্রুপে একটা সাংস্কৃতিক ফাংশান লাগিয়ে দিল। রবীন্দ্রসংগীত, গীতিনাট্য আর প্রধান অতিথির গলায় মালা-চাদর। দর্শক অভ্যর্থনা করা হল চন্দনের টিপ আর গোলাপজলের ঝারি দিয়ে – সে এক মনোহরা উৎসব। একটা মেয়ে, দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীন, এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে জোগাড়যন্ত্র করছে, সহকারীদের মিষ্টি বকুনি দিচ্ছে! সকলেই মুগ্ধ! সেই আসরেই এই অনন্য মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেল অভিবাসী সমাজের দীপ্যমান স্কলার প্রদীপ্ত দে। সে গল্প আমি প্রদীপ্তর কাছে শুনেছি।

1 টি মন্তব্য:

মাতৃত্বের স্বাদ

  “হ্যালো! মিস বিশ্বাস?”  অচেনা স্বর, কিন্তু বাঙালি উচ্চারণ। “ইয়েস, ’অ্যাম ডক্টর বিসওয়াস। হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?” কোভিড-এর কড়া লকডাউন আলগা হ...